ডঃ ফিরোজ মাহবুব কামাল এর ব্লগ থেকে সংগৃহীত
অনেক মুসলমানও পাশ্চাত্যের নীতিকে ধর্ম-নিরপেক্ষ বলে প্রশংসায় বিভোর। তাদের যুক্তি, পাশ্চত্য দেশগুলীতে নামায-রোযার স্বাধীনতা রয়েছে। রয়েছে মসজিদ ও মাদ্রাসার গড়ার স্বাধীনতা। রয়েছে ধর্মীয় লেবাস পড়ে রাস্তায় চলাফেরা ও ধর্মীয় উৎসব পালনের স্বাধীনতাও। পাশ্চাত্য দেশের অনেক সরকার মসজিদ গড়ার জন্য জমি দেয়, এমনকি অর্থও দেয়। তারা আরো উল্লসিত যে, রোযার মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে মুসলিম নেতাদের ইফতারির দাওয়াত দেয় এবং ঈদের দিনে বাণীও দেয়। যে কারণে তারা পাশ্চাত্যে এ আচরণে প্রশংসায় সোচ্চার তার মূল কারণ মূলতঃ একটিই। আর তা হল অজ্ঞতা। আর সে অজ্ঞতা যেমন ইসলামের মূল শিক্ষা নিয়ে, তেমনি ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের মূল এজেন্ডা নিয়ে। অজ্ঞতার কারণেই তারা ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের সাথে এক করে ফেলে। পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলো ধর্মীয় স্বাধীনতা বলতে বিভিন্ন ধমের্র অনুসারিদের যে অধিকার দেয় সেটি উদার নয়, উম্মূক্তও নয়।
বরং সেটি প্রচন্ড ভাবে সীমিত এক স্বাধীনতা। এবং সে স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ মূলতঃ তিনটি বিষয়ে। এক, সৃষ্টিকর্তা নিয়ে বিশ্বাসের স্বাধীনতা। সেটি নানা ধর্মে নানা রূপ হতে পারে, এবং পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ জনগণের সে নানারূপ ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে মাথা ঘামায় না। কোনরূপ হস্তক্ষেপও করেনা। তাই কোন ব্যক্তি যদি সাপ-শকুন-গরু বা কোন ব্যক্তিকে দেবতার আসনে বসায় তাতে যেমন বাধা দেয় না, তেমনি কেউ যদি একমাত্র আল্লাহকে উপাস্য রূপে বিশ্বাস করে সে বিশ্বাসেও বাধা দেয় না। দুই, ব্যক্তি তার উপাস্য প্রভূকে কিভাবে এবং কোথায় গিয়ে উপাসনা করবে, তাতেও তারা বাধা দেয় না। এটিকে তারা ব্যক্তিগত ব্যাপার মনে করে। তাই কেউ মন্দির, গীর্জা বা বৌদ্ধবিহারে গিয়ে উপাসনা করলে যেমন বাধা দেয না, তেমনি বাধা দেয় না মসজিদে যেতেও। বাধা দেয় না হজ্ব বা রোযা পালনে। তিন, পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ স্বাধীনতা দেয় ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে প্রতিটি ধর্মের অনুসারিদেরই নিজস্ব আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস তথা সংস্কৃতি গড়ার। অধিকার দেয় নিজস্ব ধর্মীয় উৎসব পালনের। কিন্তু ইসলামে ব্যক্তির ধর্মীয় দায়দায়িত্বই ভিন্ন। তাকে শুধু নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মকর্ম ও ধর্মীয় উৎসব নিয়ে ভাবলে চলে না, তাকে রাষ্ট্র ও সমাজের সংস্কারেও ভাবতে হয়। এবং সে সাথে সর্বপ্রকার সামর্থেরও বিণিয়োগ করতে হয়। নইলে আল্লাহর উপর বিশ্বাসী হয়েও তাকে প্রচন্ড গুনাহগার হতে হয়। অন্যান্য ধর্ম থেকে ইসলামের পার্থক্য তাই বিশাল, ফলে সুযোগ নাই অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামকে এক করে দেখার। কিন্তু সমস্যা হল, পাশ্চাত্য ইসলামের এ ভিন্নতর বৈশিষ্ঠ মানতে রাজী নয়, তারা রাজী নয় ইসলামকে অন্যান্য ধর্ম থেকে পৃথক ভাবে দেখতে। ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবন-বিধান, ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নিযে ইসলামের যে সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা রয়েছে এবং মুসলমানের দায়িত্ব যে সে সব কোরআনী নির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন -সে ধারণা পাশ্চাত্যের সেকুলারদের নেই। আর যত বিতন্ডা এখানেই। তারা জানে না, বা জানলেও মানতে রাজ নয় যে, উপরুক্ত তিনটি মাজহাবগত বিষয়ে পবিত্র কোরয়ানে যত আয়াত নাযিল হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী আয়াত নাযিল হয়েছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব জুড়ে ইসলামকে বিজয়ী করার তাগিদ দিয়ে। পবিত্র কোরআনে মুসলমানদের জানমালের সবচেয়ে বড় কোরবানীটি পেশ করতে বলা হয়েছে একাজগুলো সমাধা করতে। নবীজী (সাঃ)-এর নিজের দাঁত ভেঁগে গেছে, তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, ৭০% সাহাবা শহিদ হয়েছেন তো একাজেই। মুসলমান হওয়ার অর্থ শুধু নামায রোযা পালন করা নয়, সমগ্র ইসলামকে গ্রহণ করা। তখন নিছক নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত পালনে ধর্ম পালন হয় না, রাষ্ট্রের সংস্কার ও প্রতিরক্ষায় জ্বিহাদেও নামতে হয়। তাই পবিত্র কোরআনে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, “হে ঈমানদারেরা! ইসলামের মধ্যে তোমরা পুরাপুরি দাখিল হয়ে যাও।” –সুরা বাকারা আয়াত ২০৮। তাই নিছক নামায-রোযা বা হজ্ব-যাকাতে ধর্মপালনের অবকাশ কোথায়? ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশ করার অর্থ হলো, তার রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা পোষাক-পরিচ্ছদকে আল্লাহর দেওয়ার বিধানের অনুসরণে নিয়ে আসা। কোন সৈনিক কি পারে তার সৈনিক জীবনের একটি ঘন্টা বা একটি দিনকে সেনাপ্রধানের নির্দেশের বাইরে রাখতে? পারে কি ক্ষণিকের জন্যও শত্রুর হুকুম মানতে? আল্লাহর বান্দাহরূপে প্রতিটি ঈমানদারের তাই দায়িত্ব হল, কোরআনে ঘোষিত আল্লাহতায়ালার প্রতিটি ফরমানকে মেনে চলা। একটি হুকুম অমান্য করার কারণে ইবলিস অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়েছিল, তেমনি অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হতে পারে একজন মুসলমানও।তাই একজন মুসলমান মসজিদে নামায পড়বে আর ব্যাংকে বসে সূদের টাকা গুণবে সেটি ইসলাম নয়। ইসলাম নয় ঘুষ খাওয়া বা পুলিশের বেশে পতিতালয় পাহারা দেওয়া। ইসলাম নয় আল্লাহর শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখতে বদ্ধপরিকর রাজনীতিবিদদের ভোট দেওয়া। অথচ সেকুলারগণ দেশে দেশে তাই করছে।
এ কথা সত্য, আজ পাশ্চাত্য দেশগুলোতে মসজিদ বা মাদ্রাসা গড়ায় বাধা নেই। এটিও সত্য, বহু মিলিয়ন ডলারও তারা বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনে দিচ্ছে। অর্থের ভান্ডার নিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দৌড়াচ্ছে মুসলিম সংগঠনের পিছনে। কিন্তু এর অর্থ কি ধর্ম নিরপেক্ষতা? ভারতবর্ষ যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের দখলে ছিল তথন তারা সরকারি অর্থে বিশাল বিশাল মাদ্রাসাও গড়েছে। কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা তো তাদেরই গড়া। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ভারতের আনাচে কানাচে মসজিদ বা মাদ্রাসা গড়তেও কোন বাধা দেয়নি। বাধা দেয়নি পীর-দরবেশদেরকে নিজ নিজ খেয়াল খুশি মাফিক লেবাস বা টুপি-পাগড়ী পড়তে এবং পীরগিরি চালাতে। কিন্তু এতে কি দ্বীনের পরিচর্যা বেড়েছে? আল্লাহর আইন কোথাও কি বিজয় পেয়েছে? মানুষের মাঝেও কি জাগ্রত হয়েছে ইসলামের বিজয় নিয়ে ভাবনা? হয়নি। কারখানা গড়াই বড় কথা নয়, মূল বিষয়টি হল, সেখান থেকে কি উৎপাদিত হল সেটি। তাই মসজিদ মাদ্রাসার সংখ্যাবৃদ্ধির চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ সেখান থেকে কীরূপ মুসলমান তৈরী হল সেটি। আর এক্ষেত্রটিতে ধরা পড়ে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের আসল কৌশলটি। তারা মাদ্রাসা গড়তে অনুমতি দিলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কোরআনের জ্ঞানচর্চা হতে দেয়নি। গড়ে উঠতে দেয়নি ইসলামের সঠিক পরিচিতি। ফলে মুসলমানদের মাঝেও ইসলাম পরিচিতি পেয়েছে হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ বা শিখ ধর্মের ন্যায় আরেকটি ধর্ম রূপে। এটি যে একটি পরিপুর্ণ জীবন-বিধান –যাতে রয়েছে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্ববিধ সমস্যার সমাধান, সে ধারণাই মুসলিম চিত্তে গড়ে উঠতে দেয়নি। ফলে কোরআন পরিচিতি পেয়েছে তেলাওয়াতের গ্রন্থ রূপে, হিদায়াতের কিতাব রূপে নয়। ভারতের উলামাগণ সারা জীবন ব্যয় করেছেন নিছক হানাফী মজহাবের আকীদা এবং ফিকাহগত অভিমতগুলোই যে নির্ভূল সেটির প্রমাণে। এভাবে সারা জীবন ব্যস্ত থেকেছেন শাফেয়ী, মালেকী বা হাম্বলী মাজহাবের উপর নিজেদের অভিমতগুলো বিজয়ী করাতে। শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের জন্য তারা সময়ই দিতে পারেনি। ফলে তাদের চোখের সামনে আইন-আদালত থেকে আল্লাহর আইন অপসারিত হল, এবং প্রতিষ্ঠা পেল ব্রিটিশ কাফেরদের আইন। তারা এটাও দেখলো, মুসলমানগণ সে কুফরি আইনের কাছে বিচার ভিক্ষা করছে, সে কুফরি আদালতের বিচারক ও উকিল হচেছ। এবং সেটি আজও হচ্ছে। অথচ এগুলি জঘন্য হারাম। কোন মুসলমানকি প্রাণ থাকতে আল্লাহর বিধানের এমন পরাজয় মেনে নিতে পারে? অথচ ভারতীয় উপমহাদেশের উলামাগণ নিজেরা এতটাই আভ্যন্তরীন বিরোধের মধ্যে ডুবে ছিল যে তারা তা নিয়ে ভাববার সময়ই পায়নি। সে কথাটিই বলেছিলেন প্রখ্যাত দেওবন্দি আলেম শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান তাঁর জীবন সায়ান্নে। এবং সেটি আন্দামান দ্বীপের ৪ বছরের কারাবাস থেকে ফেরার পর দেওবন্দের এক জলসায়। সে জলসায় মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, মাওলানা হোসেন আহম্মদ মাদানী, মাওলানা মুফতি শফি, মাওলানা শিব্বির আহম্মদ ওসমানি সহ বড় বড় দেওবন্দি আলেম উপস্থিতি ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি মুসলিম উম্মাহর দুরবস্থা নিয়ে যতই ভেবেছি ততই আমার কাছে যেটি সুস্পষ্ট হয়েছে তা হল, মুসলমানদের আজকের দুরবস্থার কারণ মূলতঃ দুটি। এক, কোরআনে থেকে দূরে থাকা। দুই, নিজেদের আভ্যন্তরীন বিরোধ। আর এ দুটি বিষয়ই ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের অনুসৃত নীতি। কোরআন থেকে দূরে রাখতেই তারা ভারতে মাদ্রাসা খুলেছিল। ফলে ভারতে মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে, কিন্ত্র দ্বীনের প্রতিষ্ঠা বাড়েনি। আলেমদের উৎসাহ দিয়েছে হায়াজ-নেফাস, নামাজের মসলা-মাসায়েল, স্ত্রী-তালাকের বিধান ও বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে বিরোধগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। আর নিজেরা ব্যস্ত থেকেছে রাজনীতি, আইন-আদালতসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো দখলে রাখতে। এ ব্যর্থতার উজ্বল দৃষ্টান্ত হল বাংলাদেশ। এদেশেটিতে যত ধর্মীয় মাদ্রাসা আছে তা বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। অথচ এদেশে আল্লাহর দ্বীনের পক্ষ শক্তি সবচেয়ে পরাজিত শক্তি। দেশটি ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল অবধি লাগাতর ৫ বছর সর্বোচ্চ শিরোপা লাভ করেছে দূর্নীতিতে। ধর্মশিক্ষার নামে বাংলাদেশে এমন অপশিক্ষার এতটাই গভীর বিস্তার ঘটেছে যে, সারা জীবন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেও হাজার হাজার ব্যক্তি এ অজ্ঞতা নিয়ে মারা যাচ্ছে যে “ইসলামে রাজনীতি নেই এবং মসজিদে রাজনীতির অনুমতি নেই।” অথচ সমাজে এ অজ্ঞ জাহেলরাই নিজেদেরকে জ্ঞানী বা আলেম বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও খেলাফত আন্দোলনের নেতা হাফেজী হুজুরকে এ অজ্ঞতা থেকে মুক্তি পেতে প্রায় ৭০ বছর লেগেছিল। এরূপ দীর্ঘকালীন অজ্ঞতার জন্য অতিশয় অনুতপ্ত হয়ে তিনি মহান আল্লাহর দরবারে তাওবাহ করেছিলেন। অথচ বাংলাদেশে হাজার হাজার হাফেজ ও হাজার হাজার মাদ্রাসা-শিক্ষকের জীবনে সে অজ্ঞতা থেকে মুক্তি জীবনের শেষ দিনেও আসেনি। তারা কবরে যাচ্ছে সেরূপ অজ্ঞতা তথা জাহেলিয়াত নিয়েই। অথচ তাদেরই দায়িত্ব ছিল দেশবাসীকে জাহিলিয়াতমূক্ত করা। কিন্তু তারা পারেননি। আলেমদেরই যেখানে এ অবস্থা, যারা কোরআন পড়তে জানে না বা পড়তে জানলেও বুঝতে পারে না তাদের অবস্থা যে কতটা অজ্ঞতাপূর্ণ হবে সেটি বুঝতে কি বাঁকি থাকে? তারা ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের ন্যায় নামায-রোযা সম্পন্ন একটি ধর্ম মনে করবে তাতে আর অস্বাভাবিক কি? ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো মুসলিম দেশে আজও মাদ্রাসা গড়তে অর্থ দিচ্ছে নিছক এ ধরণের অজ্ঞতা বাড়ানোর স্ট্রাটেজি নিয়ে। তাই মাদ্রাসা গড়ছে আফগানিস্তানে, গড়ছে পাকিস্তানে, এমনকি বাংলাদেশেও। আর এটিকেই তাদের সেকুলার ভক্তরা ধর্মনিরপেক্ষতার চমৎকার নজির রূপে পেশ করছে।
অথচ এ পৃথিবীতে ইসলামের এজেন্ডাই ভিন্ন। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা বিশ্বজুড়ে আল্লাহর বিধানের শুধু বিশ্বজোড়া প্রচারই নয়, বিজয়ীও করতে চায়। মহান আল্লাহতায়ালা লক্ষাধিক নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। কিন্তু তারা সবাই এসেছিলেন তাদের নিজ নিজ জনপদে নিজ কওম বা গোত্রের কাছে। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)ই একমাত্র নবী যাকে পাঠানো হয়েছে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি আপনাকে (মুহাম্মাদ (সাঃ)কে) সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” বাইবেলে কোথাও একথা বলা হয়নি যে হযরত ঈসা (আঃ) সমগ্র মানব জাতির জন্য পাঠানো হয়েছিল। তেমনি তাওরাতের কোথাও একথা নেই যে হযরত মূসা (সাঃ)সমগ্র মানুষ জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। উভয়কেই পাঠানো হয়েছিল বনি ইসরাইলদেরকে আল্লাহর দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনতে। পবিত্র কোরআনে সে কথাগুলো বার বার এসেছে। আল্লাহর দ্বীনকে বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একমাত্র নবীজী (সাঃ)কে। তিনি যেমন সর্বশেষ নবী, মুসলমানগণ হল তেমনি আল্লাহর সর্বশেষ নির্বাচিত উম্মাহ। সর্বশেষ উম্মাহ কারণে তাদের দায়িত্ব হল, আল্লাহর এ দ্বীনকে সমগ্র মানব জাতির কাছে পৌছে দেওয়া। এবং সে সাথে বিজয়ী করাও। এজন্য শুধু দাওয়াহ বা তাবলিগ নয়, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং জ্বিহাদও অনিবার্য হয়ে পড়ে। তখন ইসলামকে মসজিদ-মাদ্রাসায় বন্দী রাখলে চলে না, জীবন ও জগতের অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিয়ে আসতে হয়। কোরআন মজীদের আয়াত, “তিনিই সেই মহান সত্ত্বা যিনি পথনির্দেশনা ও সত্য দ্বীনসহ রাসূল পাঠিয়েছেন যেন দুনিয়ার সকল ধর্ম বা বিধানের উপর বিজয়ী হতে পারে। যদিও সেটি মুশরিকদের জন্য অপছন্দের।” -সুরা আস্-সাফ আয়াত ৯। একই রূপ মিশনের কথা বলা হয়েছে সুরা আল-ফাতহ’র ২৮ নম্বর আয়াতে। সেখানে বলা হয়েছে, “তিনিই সেই মহান সত্ত্বা যিনি পথনির্দেশনা ও সত্য দ্বীনসহ রাসূল পাঠিয়েছেন যেন দুনিয়ার সকল ধর্ম বা বিধানের উপর যেন বিজয়ী হতে পারে। এবং সাক্ষীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট।” সে অভিন্ন ঘোষণাটি এসেছে সুরা আত-তাওবাহ’র ৩৩ নম্বর আয়াতেও।
বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে মহান আল্লাহতায়ালা একবার নয়, তিনবার সেটির ঘোষণা দিয়েছেন। এবং তা হলো বিশ্বজুড়ে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়। তবে সে বিজয়টির অর্থ, বিশ্বজুড়ে নিছক নামায-রোযার প্রচলন নয়, বরং সে বিজয়ে প্রতিষ্ঠা পাবে মহান আল্লাহর সমগ্র বিধানগুলি। সে ব্যাপারেও সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে মহান আল্লাহর। সুরা মায়েদার ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “ -এবং যারা আমার নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেনা তারা কাফের। একই সুরার ৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “এবং যারা আমার নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেনা তারা জালেম।” একই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে সুরা মায়েদার ৪৪ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, “এবং যারা আমার নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেনা তারা ফাসেক।” আল্লাহর নাযিলকৃত কোরআনী বিধানের বাস্তব প্রয়োগটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সেটি বুঝাতে মহান আল্লাহতায়ালা একই সুরার তিনটি আয়াতে সেটির ঘোষনা দিয়েছেন। ফলে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার যে দাবী নিছক কোন মাথা-গরম চরমপন্থির দাবী নয়, এ দাবী প্রতিটি ঈমানদারের। একজন মুসলমান আল্লাহর সে মহান নির্দেশের অবাধ্য হয় কি করে? অবাধ্যতা তো তাকে শুধু কাফের রূপে নয়, জালেম এবং ফাসেক রূপেও চিহ্নিত করবে।
সুরা আশ-শুরার ১৩ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, “তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথনির্দেশনাই নির্ধারিত করে দিয়েছেন যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি ওহীর মাধ্যমে অবগত করেছেন আপনাকে, এবং যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ইব্রাহীম, মূসা এবং ঈসাকে এ মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং এ ব্যাপারে তোমরা বিভক্ত হয়ো না।” এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে এসেছে দ্বীনের প্রতিষ্ঠার কথা, নিছক তেলাওয়াত নয়। নামায-রোযা পালনও নয়। কিন্তু পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গ মহান আল্লাহতায়লার নিজের দ্বীন প্রতিষ্ঠার এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন হতে দিতে চায় না। এটিকে রুখতেই প্রতিটি্ মুসলিম দেশে তাদের দ্বিমুখি স্ট্রাটেজী। এক, তারা কোরআনের এ আয়াতকেই তারা ভূলিয়ে দিতে চায়। এজন্যই সৌদি আরবসহ প্রতি মুসলিম দেশে তারা স্কুল-কলেজ ও দ্বীনী মাদ্রাসার সিলেবাস পাল্টাতে বলছে। আর যেখানে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে মানুষ ময়দানে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করছে। যেমনটি আফগানিস্তানে হচ্ছে। হচ্ছে পাকিস্তানের তালেবান প্রভাবিত এলাকায়।
কথা হল, এটি কি ধর্মনিরপেক্ষতা? ধর্মনিরপেক্ষ হলে তবে অধিকার থাকতে হবে মুসলমানদের নিজদেশে নিজ ধর্মের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের। আর রাষ্ট্র্র ও সমাজ জুড়ে আল্লাহর বিধানের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা ছাড়া দ্বীনের ধর্ম পালন বা ধর্মের অনুসরণ কি করে সম্ভব? কথা হল, আল্লাহর বিধানের প্রয়োগ কি শুধু নামাযে বসে হয়? হয় কি কোরআন খুলে সে গুলো তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে? অথচ ব্রিটিশ শাসনামলে ইসলামের শিক্ষা বলতে ভারতের মাদ্রাসাগুলোতে সেটিই হয়েছে। আইনের প্রয়োগে অপরিহার্য হল, রাষ্ট্রের ক্ষমতা হাতে নেওয়া। আর শুধু নামায পড়ার কারণে রাষ্ট্রের সে ক্ষমতা হাতে আসে না, নবীজী (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরামকে সে জন্য জ্বিহাদে নামতে হয়েছে। আর এ ইসলামকে সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্য দেশগুলো মেনে নিতে রাজী নয়। তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সত্য হলে উচিত ছিল, আল্লাহর পক্ষ থেকে দ্বীনের বিজয় আনতে প্রতিটি মুসলমানকে নিজ নিজ দায়িত্বপালনে পূর্ণ সুযোগ দেওয়া। এটিও তো ধর্মপালনের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। ধর্মীয় স্বাধীনতা বলতে এ স্বাধীনতাও তো বুঝায়। অথচ আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনের কাজকে সেকুলার পক্ষ এবং সে সাথে পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গ মৌলবাদী বলছে। সন্ত্রাস নির্মূলের নামে তারা তাদের নির্মূলে লেগেছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গ নিজ দেশে মসজিদ নির্মাণে জমি বা অর্থ দিলে কি হবে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া বা অন্য যে কোন মুসলিম দেশে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দাবী তারা মানতে রাজি নয়। এটি হলে সেদেশে তারা পাশ্চাত্য মূল্যবোধ ও দর্শনের পরাজয় মনে করে। নিজেদের আদর্শ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সে পরাজয় এড়াতে তারা আলজেরিয়ায় ইসলামিক সালভেশন পার্টির নেতাদের বন্দী বা হত্যা করে চলেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কারের এমন এজেন্ডা খৃষ্টান ধর্ম, হিন্দু ধর্ম বা শিখ ধর্মের নাই। ফলে পাশ্চাত্য সরকারসমূহের ধর্ম-বিশেষক নীতি মেনে নিতে তাদের কোন আপত্তিও নেই। কিন্তু মুসলমান যদি সেটি মেনে নেয় তবে কি মহান আল্লাহর খাতায় সে ব্যক্তি মুসলমান রূপে চিহ্নিত হবে? সেটি হলে তা হবে আল্লাহর সাথে গাদ্দারি। আল্লাহতায়ালার খাতায় তারা তখন চিহ্নিত হবে কাফের, জালেম ও ফাসেক রূপে, এবং সে ঘোষণাটি সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ এবং ৪৭ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্টভাবে শুনিয়ে দিয়েছেন। কথা হলো, মুসলমানেরা কি পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ বা সংখ্যালঘু অমুসলমানদের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজনীতি বা ধর্ম পালন করবে? নবীজীর আমলে কি আরবভূমিতে অমুসলমানের সংখ্যা কম ছিল? এখনও মিশর ও লেবাননে অমুসলমানদের অনুপাত বাংলাদেশের অমুসলমানদের অনুপাতের চেয়ে বেশী। তাদের কাজ হলো, মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কি বলেছেন সেটির প্রতিটি শব্দের দিকে খেয়াল রাখা। এবং তার বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের প্রতিটি শব্দই গুরুত্বপূর্ণ। কোন একটি শব্দ বুঝতে ভূল করলে ঔষধ গ্রহণে বিভ্রান্তি ঘটে এবং সে বিভ্রান্তিতে রোগীর মৃত্যুও ঘটে। তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোরআনের প্রতিটি আয়াতগুলি বোঝার বিষয়টি। কোরাআন না বুঝার কারণে বিভ্রান্তি ঘটে ইসলামকে বুঝতে। তখন মুসলমান রূপে বাঁচাটিই অসম্ভব হয়। মুসলমান রূপে বেঁচে থাকা ও দায়িত্ব পালনের স্বার্থে কোরআন বুঝার বিকল্প নেই। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের মাঝে আল্লাহর নির্দেশাবলী বুঝার আগ্রহ এতটাই তীব্র ছিল যে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, আলজেরিয়া, সূদানের ন্যায় বহু দেশের মানুষ নিজেদের মাতৃভাষার শেখার চেয়ে কোরআনের ভাষা শিক্ষা করাকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। মানুষের ভাষা বুঝতে ভুল করলে ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছু ব্যাঘাত ঘটলেও বড় বিপর্যয় আসে না। অথচ আল্লাহর বিধান বুঝতে ব্যর্থ হলে তখন সারা জীবন ব্যাপী বাঁচাটিই ব্যর্থ হয়ে যায়। রোড-ম্যাপ না বুঝে গাড়ী চালালে যেমনটি হয়।
বিপক্ষ-শক্তির অভিযোগ, ধর্ম-ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলে ইতিহাস রক্তাত্ব হবে। এ ব্যাপারে কথা হলো, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলে কি হবে সে বিচার অহেতুক। কথা হল, সে বিষয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছা জাহিরের অধিকারও কি মুসলমানের আছে? আল্লাহর দ্বীন যেখানে পরাজিত ও অপমানিত, মুসলমানের দায়িত্ব হল, ইসলামের বিজয় ছিনিয়ে আনতে ময়দানে নেমে যাওয়া। এক্ষেত্রে নীরবতা বা স্থবিরতা হলো আল্লাহর ফরমানের বিরুদ্ধে গাদ্দারি। অথচ আজকের মুসলমানেরা সেটিই করছে। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সাহায্য আসে মহান আল্লাহর। একমাত্র এ পথেই আসে মুসলমানের ইজ্জত। দ্বীনের বিজয়ে সমাজ বা রাষ্ট্র রক্তাত্ব হবে, এটি ডাহা মিথ্যা। ইসলামের প্রতিষ্ঠায় বরং দেশে দেশে শান্তিই প্রতিষ্ঠা করেছে, এবং বাড়েনি রক্তপাত। রক্তপাত তো বেড়েছে আজকের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ বা সেকুলার শক্তির হাতে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দুই পক্ষে যারা লড়েছিল তারা কেউই ধর্মীয় রাষ্ট্রের ধ্বজাধারি ছিল না, ছিল সেকুলার। কিন্তু তারা এ দুটি যুদ্ধে ৭ কোটির বেশী মানুষের প্রাণনাশ ঘটিয়েছে। বিনাশ ঘটিয়েছে বিশাল বিশাল নগরী ও তার সহায়-সম্পদের। লিখিত ইতিহাসে এ অবধি প্লাবন, ঘূর্নিঝড় ও ভূমিকম্পসহ যত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিবরণ আছে তার সবগুলোতে জান-মালের এতবড় ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি যা হয়েছে এ দুটি বিশ্বযুদ্ধে। এরা ধ্বংস করেছে ভিয়েতনাম। আজ ধ্বংস করেছে ইরাক ও আফগানিস্তান। মানবিক অধিকারের কথা? তারা তো আফ্রিকার কালোদের গলায় রশি বেঁধে এই সেদিনও গরুছাগলের ন্যায় হাটে তুলেছে। আরেক অভিযোগ, ধর্ম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলে দেশে নানা ধর্মের নামে বিশ্বের অসংখ্য রাষ্ট্রের জন্ম নিবে। তখন বাড়বে ধর্মীয় সংঘাত। অন্যান্য অভিযোগের ন্যায় এ অভিযোগটিও ভূয়া। ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্মের অনুসারিরা ধর্ম-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা মুখেই আনে না। সেটি যেমন খৃষ্টানদের ধর্মীয় নেতা পোপ বলে না, তেমনি বলে না কোন হিন্দু ঋষি বা ইহুদী রাব্বাই। বলে না বৌদ্ধরাও। কারণ এসব ধর্মের কোনটিতে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার কোন তাগিদ নেই। সেজন্য প্রয়োজনীয় বিধানও নেই। ইসরাইলকে ধর্ম-রাষ্ট্রের উদাহরণ দেওয়া হয়। এটিও ভূল। ইসরাইল কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, এটি এক বর্ণবাদী রাষ্ট্র। সেখানকার আইন, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ সবই তো সেকুলার। ফলে বিভিন্ন ধর্মীয় রাষ্ট্রের কারণে বিশ্বটি সংঘাতময় হবে সেটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। বরং অতীতের ন্যায় বিশ্ব আজও যেরূপ বিভক্ত এবং সংঘাতময় সেটি তো সেকুলারিজম বা অধর্মের কারণে। তাছাড়া মুসলিম বিশ্ব আজ যে ৫৫টির বেশী রাষ্ট্রে বিভক্ত এবং কোথাও কোথাও সংঘাতময় সেটি কি ধর্মীয় রাষ্ট্র হওয়ার কারণে? কোন মুসলিম রাষ্ট্রটি ধর্মীয় রাষ্ট্র? এসব রাষ্ট্রগুলোতে বিজয়ী শক্তি রূপে যারা বসে আছে তারা তো সেকুলার জাতিয়তাবাদী, ইসলামে অঙ্গিকাহীন স্বৈরাচারি শাসক বা রাজতন্ত্রি। অথচ মুসলিম রাজনীতিতে ইসলাম প্রাধান্য পেলে প্রভাব বাড়তো মুসলিম উম্মাহর ধারণা, তথন নানা ভাষাভাষী মুসলমানেরা জাতীয়তাবাদ-সৃষ্ট ভাতৃঘাতি বিভক্তির বদলে এক বৃহৎ ভূগোলে এক বৃহৎ বিশ্ব-শক্তির জন্ম দিতে পারতো। তখন কমতো আভ্যন্তরীণ সংঘাত। অথচ ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে মুসলিমনামধারিরা ইসলামের সে বিজয়টি হতে দিতে রাজী নয়। রাজী নয়, মুসলিম দেশের আইন-আদালতে কাফেরদের আইন সরিয়ে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠা দিতে। তাদের নিরপেক্ষতার দাবী প্রচন্ড প্রতারণাপূর্ণ। প্রতিটি মুসলিমদেশে তাদের স্ট্রাটেজী হলো, ইসলামের বিধানের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিরোধ করা। এবং নির্মূল করা ইসলামের জ্বিহাদী চেতনাকে। এজন্যই তারা কোয়ালিশন গড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশসমূহ ও ভারতের সাথে। তাই মুসলমান রূপে বাঁচতে হলে এবং ইসলামকে বিজয়ী করার মিশনে শরীক হতে হলে শুধু কোরআন-হাদীসকে বুঝলে চলে না, বুঝতে হয় মুখোশধারি সেকুলারদের কৌশলকেও।