মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘এ রাসুলগণের মধে কাউকে কারো উপর আমি শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।’(সূরা বাকারা-২৫৩)
মহান আল্লাহ তা’য়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। তারা মহান আল্লাহ তা’য়ালার একত্বের বাণী তাদের জাতির নিকট প্রচার করেছেন, যাতে তারা তার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে। আল্লাহর ইবাদত করতে পারে এবং সরল পথের সন্ধান লাভে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। সকল নবী-রাসুলের একই বাণী ছিল যে, তোমরা এক আল্লাহকে স্বীকার এবং তার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার বানিও না। আল্লাহতা’য়ালার ইবাদত এবং আনুগত্য সম্পর্কে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-মহান আল্লাহতা’য়ালা বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদত কর, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৃষ্টি করেছেন; সম্ভবতঃ তোমরা মুত্তাকী হতে পারবে অর্থাৎ নিজেদেরকে পাপমুক্ত করতে পারবে।’ (সূরা বাকারা-২১)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীতে অগণিত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তবে কখনো কখনো একই সময়ে দুই-তিনজন নবীকেও পৃথিবীতে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্রের নিকট প্রেরণ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সম্প্রদায় এবং গোত্রের নিকট মহান আল্লাহর হেদায়েতের বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং তাদেরকে আল্লাহর সরল পথে আহ্বান করেছেন। একমাত্র সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সারা বিশ্বের এবং সকল সম্প্রদায় ও সকল গোত্রের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। যা অন্য নবী-রাসূলদের সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি। অন্য নবীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রাসূল পাঠিয়েছি। যিনি এই বলে তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতের আনুগত্য পরিহার করো অর্থাৎ শয়তানী কার্যসমূহকে পরিহার করো।’ (সূরা নাহল-৩৬)
এ সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই সামুদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম, এ আদেশসহ যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, কিন্তু ওরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হল।’ (সূরা নামল-৪৫)
আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন, ‘আমি মাদায়েনবাসীদের নিকট তাদের ভাই শোয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার জাতি তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য কোনো ইলাহ অর্থাৎ ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই।’
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই তার প্রিয় নবীর শ্রেষ্ঠত্বের কথা এবং সমস্ত নবী ও রাসুলের উপর তার শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে যে, অন্যান্য নবী-রাসুলকে সমগ্র বিশ্বের জন্য এবং একাধিক জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্যও তাদের প্রেরণ করেননি। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর শ্রেষ্ঠত্বের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, তিনি অনন্য গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন। অন্যান্য নবী-রাসুলের তুলনায় তার ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, উদারতা, স্নেহ-মমতা, মানব প্রেমপ্রীতি ও ভালোবাসা এবং ক্ষমার যে অনুপম দৃষ্টান্ত বিদ্যমান তা পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোথাও দেখা যায় না।
তিনি বিপদে কখনো অধৈর্য হননি। আল্লাহর প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ও অটল বিশ্বাস এবং পাহাড়সম ধৈর্য। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় তিনি যখন ছাওর পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন ভয়ে হযরত আবু বকর (রা:) বললেন যে, হে নবী করীম (সা:) শত্রুরা তো আমাদের কাছে এসে পড়েছে এখন উপায় কী? উত্তরে তিনি বললেন, ভয় করো না। মহান আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন, তিনি আমাদের রক্ষা করবেন।
মক্কা বিজয়ের দিন তিনি, যারা ইসলাম প্রচারে তার প্রতি চরম শত্রুতা করেছে, নির্যাতন করেছে এমনকি তাঁকে হত্যার জন্য চেষ্টা করেছে তাদেরকে কোনো প্রকার প্রশ্ন ছাড়াই অতি সহজে ক্ষমা করে দিয়ে ইসলামের পতাকা তলে আশ্রয় দান করলেন। এসবই ছিল তার নবুয়তের শ্রেষ্ঠত্বের গুণাবলী ও মাহাত্ম্য।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘ হে নবী নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা ক্বলম-৪) তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র হয়েছিলে, যদি তুমি কঠোর চিত্ত হতে তবে তারা তোমার নিকট হতে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা চাও এবং কাজকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর এবং তুমি কোন সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্ভরশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা আল ইমরান-১৫৯)।
হে মহান রাব্বুল আলামীন শ্রেষ্ঠ নবীর, শ্রেষ্ঠ উম্মাহ আমরা। আমাদের জীবনকে সুন্দর পথে সরল পথে চালাও। আমাদেরকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়ার চরিত্র দান কর। সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, নবীর চরিত্র দান কর। দেশ ও জাতিকে দেশপ্রেমিক এবং মানবপ্রেমিক হওয়ার তৌফিক দান কর। আমীন।