৭১১ খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়া শাসনামলে বীর মুজাহিদ তারিক বিন জিয়াদ ভূমধ্যসাগরের উত্তর তীরস্থ স্পেনের জনগণকে রক্ষা করেছিলেন রাজা রডরিকের অসহনীয় দুঃশাসন থেকে। জিয়াদ স্পেনে ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্য ও কল্যাণের যে সূত্রপাত করেছিলেন স্পেনবাসী সুদীর্ঘ ৮০০ বছর ধরে এর সুফল ভোগ করেছিল। স্পেনের সোনালী যুগের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে গ্রানাডা, আন্দালুসিয়া আল হামরা, কর্ডোভা, সেভিল, টলোডা। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিস্ময়কর উন্নতির ফলে দেশটিতে তখন ছিল অর্থ সম্পদ, বিত্ত-বৈভবের অঢেল জোয়ার। কিন্তু মুসলমান শাসকরা কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শ বিস্মৃত হয়ে পড়ায় এবং বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেয়ার ফলে তাদের জীবনে সীমাহীন দুর্ভোগই কেবল নেমে আসেনি বরং মুসলমানদের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিলীন হয়ে গেছে স্পেনের মাটি থেকে।
তরবারির জোরে মুসলমানরা দীর্ঘ ৮০০ বছর স্পেন শাসন করেনি। জোর-জুলুম করলে স্পেনে কোন অমুসলিমই থাকার কথা ছিল না। তবে, মুসলমানদের দুর্বলতার সুযোগ খ্রিষ্টান নৃপতিরা স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করতে ঠিকভাবেই কাজে লাগিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল পিরেনিজ পর্বতমালা অতিক্রমকারী দুর্ধর্ষ মুসলিম বাহিনীকে যদি পশ্চাৎপসরণে বাধ্য করা না যায় তবে হয়তো আগামী দিনগুলোতে ইউরোপের সব গির্জা থেকে আজানধ্বনি শোনা যাবে। তাই পর্তুগিজ রাণী ইসাবেলা চরম মুসলিম বিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী রাজ্যের খ্রিষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ডের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর দু’জনে মিলে মুসলিম নিধনের নেতৃত্ব দেন। তারা স্পেনের মুসলিম শাসনকর্তা হাসানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে না পেরে তারই পুত্র আবু আব্দুল্লাহকে সুকৌশলে হাত করেন। খ্রিষ্টানদের যৌথবাহিনী হাজার হাজার নিরীহ মুসলিম নারী ও পুরুষ শিশুকে হত্যা করে। তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে উল্লাস করতে করতে রাজধানী গ্রানাডার দিকে ছুটে আসে। তারা আশপাশের সব শস্যখামারও জ্বালিয়ে দেয়। শহরের খাদ্য সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র ভেগা উপত্যকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। যার ফলে চরম দুর্ভিক্ষ নেমে আসে গ্রানাডা শহরে।
দুর্ভিক্ষ প্রকট আকার ধারণ করলে প্রতারক ফার্ডিন্যান্ড মুসলমানদের উদ্দেশে এই মিথ্যা আশ্বাস ঘোষণা করে, মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নেয় তবে তাদের ওপর আক্রমণ করা হবে না, তাদেরকে হত্যা করা হবে না এবং মুক্তি দেয়া হবে।
চরম দুর্ভিক্ষ তাড়িত গ্রানাডাবাসী মুসলমানরা ফার্ডিন্যান্ডের ধোঁকা বুঝতে না পেরে, অবোধ শিশু ও নারীদের কথা ভেবে, তার আশ্বাসে বিশ্বাস করে। তারা শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয়। সরল বিশ্বাসে সবাইকে নিয়ে মসজিদে আশ্রয় নেয়। তখন ফার্ডিন্যান্ডের নির্দেশে সৈন্য বাহিনী শহরে প্রবেশ করে। মুসলমানদেরকে মসজিদের ভেতরে আটকিয়ে রেখে একযোগে শহরের সবকটি মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বর্বর উল্লাসে মেতে ওঠে। লক্ষ লক্ষ অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুর আর্তনাদে গ্রানাডার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মুসলমানরা মসজিদের ভেতরেই জীবন্ত দগ্ধ হয়। এ দিনটি ছিল ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল। দীর্ঘ ৮০০ বছরব্যাপী মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং রাণী ইসাবেলা তখন ক্রুর হাসি হেসে উচ্চকণ্ঠে বলে বলেছিলেন ’ অঢ়ৎরষ ভড়ড়ষ ’, হায় এপ্রিলের বোকা!’ শত্রুর আশ্বাসে বিশ্বাস করে প্রতারিত হয় মুসলিমরা।
মুসলমানদের বোকা বানানোর এই নিষ্ঠুর খেলাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই তারা প্রতি বছর ‘১ এপ্রিল’ মহা আনন্দের সাথে পালন করে থাকে। অজ্ঞতাবশত মুসলিম ছেলে-মেয়েরাও এপ্রিল ফুল পালন করে আসছে। আজতক মুসলিম উম্মাহ এই দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণাদানের বিজ্ঞতা দেখাতে পারেনি। সংগৃহীত ইত্তফাক